পায়ের রগে হঠাৎ টান ধরলে কি করবেন

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঘুমিয়ে আছেন হঠাৎ পায়ের মাংসপেশির টানের ব্যথায় কঁকিয়ে উঠলেন আপনি। এমতাবস্থায় পা সোজা বা ভাঁজ করা সম্ভব না। একটানা পা ভাঁজ করে রেখে হঠাৎ সোজা করতে গেলে পায়ের পেশিতে টান পড়ে তখনই পায়ের পেশীতে বা রগে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হয়। এমনটা ঘুমের মধ্যে বা জেগে থাকা অবস্থাতেও হতে পারে। তবে ঘুমন্ত অবস্থায় বেশি হয়ে থাকে। দীর্ঘসময় ধরে অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে অনেক সময় পায়ের পেশিতে বেশি টান লাগতে পারে। আবার দীর্ঘক্ষণ বসে বা দাঁড়িয়ে থাকলেও এমনটা হয়ে থাকে।আরো নানান কারনে হতে পারে। যেমন, পানিশূন্যতা, মাংসপেশী বা স্নায়ুতে আঘাত, রক্তে পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের অভাব, কিছু ঔষধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া যেমন, হাইপারটেনশন ও কোলেস্টেরল, কয়েকটি বিশেষ ভিটামিনের অভাবে যেমন, ভিটামিন ‘বি’ B1, B5, B6।

কিছু বদভ্যাসের কারনে যেমন, ধূমপান, মদপান। ধূমপায়ীদের পায়ে রক্ত চলাচল কম হয় বলে সামান্য হাঁটাহাঁটিতেই তাদের পায়ে টান লাগে। গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন স্নায়ুতে চাপ পড়ে থাকে, তাই ওই সময় পায়ের পেশীতে টান লাগা স্বাভাবিক ব্যাপার। আবার হাইপোথাইরয়েডিজম, কিডনি ফেইলিওর, মেন্সট্রুয়েসন, গর্ভসঞ্চার ইত্যাদির কারনেও পেশীতে টান লাগতে পারে।পেশীতে টান পড়লে যে পায়ের পেশীতে টান পড়লো দ্রুত সেই পায়ের পেশীকে শিথিলায়ন বা রিলাক্স করতে হবে। এতে পেশী প্রসারিত হবে এবং আরাম পাবেন। পেশীকে প্রসারিত করার নিয়ম হল, আপনার যদি হাঁটুর নিচে পায়ের পিছনের মাসলে টান লাগে তাহলে পা সোজা করে হাত দিয়ে পায়ের আঙুলের মাথাগুলো ধরে আপনার দিকে আস্তে আস্তে টানুন। আর যদি সামনের দিকে হয় তাহলে পা ভাঁজ করে পায়ের আঙুলের মাথাগুলো পেছনের দিকে টানুন।

অনেক সময় উরুর পেছনেও এমনটা হয়, তখন চিৎ হয়ে শুয়ে পা ভাঁজ করে হাটুঁ বুকের দিকে নিয়ে আসুন যতোটুকু পারা যায়। আর উরুর পেছনের পেশীতে আলতো হাতে আস্তে আস্তে মালিশ করুন আরাম পাবেন। আর যদি পেশী শক্ত হয়ে আসে তখন ওয়াটার ব্যাগ বা হট ব্যাগের মাধ্যমে কিছুক্ষণ গরম সেঁকা দিন আক্রান্ত পেশীতে।আবার যদি পেশী বেশি নরম ও ফুলে যায় আর ব্যথা থাকে তাহলে তাতে আইসব্যাগ দিয়ে ঠাণ্ডা সেঁক দিন। বেশ আরাম পাবেন। প্রত্যেকের বাসায় মুভ বা ভিক্স জাতীয় ব্যথানাশক বাম বা জেল থাকে, তা দিয়ে আলতো হাতে মালিশ করা যেতে পারে ওই পেশীতে।আর ‘পেশীর টানমুক্ত’ অবস্থায় ভালো থাকতে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামযুক্ত খাবার খান। শাকসবজি, ফল, খেজুর, দুধ ও মাংসতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম রয়েছে। তাই এই খাবারগুলো বেশি বেশি খান।

আরও জানতে পড়ুন: পেশীতে টান পড়া রোধ করুন ৫টি সহজ উপায়ে

পেশিতে টান পড়ার সমস্যাটা বেশি দেখা যায় খেলোয়াড় বা অ্যাথলিটদের মাঝে। তবে সাধারণ মানুষদেরও এই সমস্যায় পড়তে হয়। সাধারণত পিছনের পায়ের পেশিতে এবং থাইয়ের সামনের অংশে পেশি টান পড়ে থাকে। যত অল্প সময়ের জন্যই হোক না কেন, এর ব্যাথা হয় প্রচন্ড। জেনে নিন যন্ত্রণাদায়ক এই সমস্যা দূর করার কিছু উপায়।মাঝে মাঝে অনেকের পেশীতে টান পড়ে। এই সমস্যাটায় বেশি খেলোয়াড়রা পড়ে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে ৩৯% ম্যারাথন রানার, ৭৯% সাধারণ ক্রীড়াবিদ এবং ৬০% সাইকেল-আরোহীদের পেশী টানের সমস্যায় পড়তে দেখা যায়। তবে সাধারণ মানুষদেরও এই সমস্যায় পড়তে হয়। সাধারণত পিছনের পায়ের পেশিতে এবং থাইয়ের সামনের অংশে পেশি টান পড়ে থাকে। কয়েক সেকেন্ড থেকে ১৫ মিনিটের বেশি সময় পর্যন্ত এই পেশী টান থাকতে পারে। পেশী টানের ব্যথা অনেক মারাত্নক হয়ে থাকে। ঘরোয়া কিছু উপায়ে এই পেশী টান সমস্যা দূর করা যায়।

(i) ঠান্ডা পানির সেঁক: ব্যথা অনেক বেড়ে গেলে ঠান্ডা পানির সেঁক দিতে পারেন। এটি আপনার পেশির টান কমিয়ে দিয়ে পেশিকে রিল্যাক্স করে দিয়ে থাকে। একটি কাপড়ে কয়েক টুকরো বরফ রেখে মুড়ে নিন। এইবার কাপড়টি দিয়ে পেশি টানের স্থানে সেঁক দিন। এটি ১৫ মিনিট ধরে রাখুন। দিনে ২ ঘন্টা পর পর এই কাজটি করুন। কিংবা ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করতে পারেন, এটিও আপনার পেশি টানের ব্যথা কমিয়ে দিবে।

(ii) আপেল সিডার ভিনেগার: পেশি টানের অন্যতম একটি কারণ হয়ে থাকে দেহে পটাসিয়ামের অভাব। আপেল সিডার ভিনেগারে উচ্চ পটাসিয়াম, বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান শরীরের তরলের ভারসাম্য করে থাকে যা ড্রিহাইড্রেশন রোধ করে থাকে। এক গ্লাস গরম পানিতে এক টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে নিন। এটি প্রতিদিন পান করুন। রাতের পেশী টান প্রতিরোধ করার জন্য এক চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার, এক চামচ মধু এবং এক টেবিল চামচ ক্যালসিয়াম ল্যাকটেট আধা গ্লাস পানিতে মিশিয়ে নিন। এটি প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আধ ঘণ্টা আগে পান করুন।

(iii) হলুদ সরিষা: হলুদ সরিয়া কয়েক মিনিটের মধ্যে পেশি টান ভাল করে দিতে পারে। সরিষাতে অ্যাসিটিক অ্যাসিড আছে যা পেশী টানের ব্যথা দূর করে দিয়ে থাকে। এক চা চামচ সরিষা খান। এটি গরম দুধের সাথে খেতে পারেন।

(iv) লবঙ্গের তেল: লবঙ্গ তেলের অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান পেশি টান এবং পেশির ফোলাভাব দূর করে থাকে। লবঙ্গের তেল কুসুম গরম করে  নিন এবার এটি পেশি টানের স্থানে ম্যাসাজ করুন ৫ মিনিট।  প্রয়োজন হলে এই ম্যাসাজ আবার করুন।

(v) পানি পান:পেশি টানের প্রধান একটি কারণ হল ডিহাইড্রেশন। যখনই পেশিতে টান পড়বে তখন ১ থেকে ২ গ্লাস পানি পান করুন। খেয়াল রাখবেন দিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পানের অভ্যাস থাকতে হবে। আপনার যদি ব্যায়াম করার কারণে পেশিতে টান পড়ে থাকে, তবে ব্যায়াম শুরুর ২ ঘণ্টা আগে কয়েক গ্লাস পানি পান করে থাকুন।

টিপস: (i) ভিটামিন ই রাতের পেশী টান প্রতিরোধ করে থাকে। এটি ধমনীতে রক্ত চলাচল সচল রাখে।

(ii) রাতে পেশী টান রোধ করতে পাতলা মোজা পরে ঘুমাতে পারেন। আপনার হাঁটুর কাছে একটি ছোট বালিশ রাখতে পারেন।

(iii) ব্যায়াম করার আগে এবং পরে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম গ্রহণ করুন।

(iv) শীতকালে পেশী টান রোধ করার জন্য বেশি পরিমাণে কাপড় পরিধান করুন।

আরও জানতে পড়ুন: রগের যত সমস্যা

পা ঠান্ডা হয়ে যায়, হাঁটলে পায়ে ব্যথা করে। মনে হয়, পায়ের রগে সমস্যা। আবার কেউ বলেন, রক্ত চলে না। রগ বন্ধ হয়ে গেছে। কারও আবার হঠাৎ রগে টান পড়ে। শরীরের ওই অংশ অনুভূতিশূন্য মনে হয়। এমন নানা উপসর্গ আছে। আসলে সাধারণ মানুষ রগ বলতে কখনো রক্তনালি, কখনো স্নায়ু, কখনো-বা মাংসপেশির সঙ্গে যুক্ত টেনডনের সমস্যাকে বোঝান। উপসর্গ অনুযায়ী বুঝে নিতে হয় সমস্যাটা কোথায়।আমাদের শরীরে মূলত দুই ধরনের রক্তনালি আছে: ধমনি ও শিরা। ধমনি ও শিরাগুলো তাদের ছোট-বড় অগণিত শাখা-প্রশাখা, উপশাখাসহ বিন্যস্ত। দুই ধরনের রক্তনালিতেই নানা রকম ব্যথা হতে পারে। যেমন পায়ের ধমনিতে বাধা তৈরি হওয়ার কারণে রক্ত চলাচলে বিঘ্ন ঘটে এবং হাঁটতে গেলে পায়ে ব্যথা শুরু হয়।

শিরার ভেতরে রক্ত জমাট বেঁধে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হলে পা ফুলে যায় ও ব্যথা করতে থাকে, যাকে বলে ডিপ ভেনাস থ্রম্বোসিস। আবার চামড়ার নিচের শিরা আঁকাবাঁকা হয়ে ফুলে যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে একজন রক্তনালি বিশেষজ্ঞ সমাধান দিতে পারেন।অনেকে স্নায়ুর সমস্যাকেও রগের সমস্যা বলে অভিহিত করেন। স্নায়ু আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে, কেটে-ছিঁড়ে যেতে পারে। হাড়ের যে ছিদ্রপথ দিয়ে সেগুলো বের হয় বা প্রবেশ করে, সেখানে চাপ তৈরি হতে পারে। আর এসবের বহিঃপ্রকাশ ঘটে শরীরের আক্রান্ত অংশে ব্যথা, জ্বালাপোড়া, অবশভাব ইত্যাদি উপসর্গের মাধ্যমে।নানা কারণে মাংসপেশিতে টান পড়ে, অনেক সময় মাংসপেশির ভেতরে রক্তক্ষরণ হয়ে মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায়। শরীরের নানা ভুল ভঙ্গির কারণেও মাংসপেশিতে টান পড়ে। যেমন দীর্ঘ সময় একই ভঙ্গিতে বসে বা দাঁড়িয়ে থাকা বা শোয়ার সময় বালিশের সঙ্গে ঘাড়ের অসামঞ্জস্যের কথা বলা যায়। আর এসব কিছুরই সাধারণ বহিঃপ্রকাশ হলো রগে টান বা ব্যথা। আঘাতে শুধু মাংসপেশিই নয়, তার সঙ্গে থাকা রক্তনালি ও স্নায়ুও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।অনেক সময় রক্তনালি, মাংসপেশি ও স্নায়ুতে একই সঙ্গে আঘাত লাগে। এমন রোগীদের চিকিৎসায় সাধারণত রক্তনালি, অর্থোপেডিক ও স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞদের একসঙ্গে কাজ করার প্রয়োজন হয়।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর